মোরগ পোলাও বাঙালি রন্ধনশিল্পের একটি রাজকীয় ও ঐতিহ্যবাহী পদ, যা বিশেষ উৎসব, বিয়ের দাওয়াত বা অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশিত হয়। দেশি মোরগের বিশেষ স্বাদ এই খাবারটিকে করে তোলে আলাদা। তবে এর মাংস তুলনামূলক বেশি শক্ত হলেও রন্ধনশৈলীর মাধ্যমে সেটি রসালো ও নরম করে তোলা হয়। পোলাওয়ের মিষ্টি ও ঘ্রাণযুক্ত চাল মোরগের মসলাদার মাংসের সঙ্গে মিশে এক অতুলনীয় স্বাদ সৃষ্টি করে। এটি শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। মোরগ পোলাও সাধারণত সালাদ, ডালঘোটা বা রায়তার সঙ্গে পরিবেশিত হয়।
জেনে নেই, এই পদটি তৈরি করতে কি কি উপকরণ লাগছে
উপকরণ
১. পোলাও এর চাল- ১ কেজি
২. বড় মুরগী বা মোরগের গোস্ত- ২ কেজি
৩. আদা রসুন বাটা- ১ টেবিল চামচ
৪. পেঁয়াজ বাটা- ১ কাপ
৫. দই- ১ কাপ
৬. গরম মশলা- পরিমাণ মত
৭. তেজপাতা- ৩-৪টা
৮. পেঁয়াজ কুচি- ৩-৪টা
৯. লবণ- পরিমাণ মত
১০. তেল- পরিমাণ মত
১১. কিশমিশ কুচি- পরিমাণ মত
১২. জাফরান- সামান্য
১৩. ঘন দুধ-- ১ কাপ
প্রস্তুত প্রণালি
মাখা, গিলা, কলিজা বাদ দিয়ে মাংস বড় বড় করে কাটতে হবে। এবারে মাংসে আদা রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা, দই, গরম মশলা, তেজপাতা দিয়ে মাখিয়ে রাখুন। একটি কড়াইয়ে ২৫০ গ্রাম তেল গরম করে ৩-৪টা কাটা পেঁয়াজ ভেজে মশলা মাখা মাংস তেলে ঢেলে দিন ও কোরমা রান্নার নিয়মে মাংস রান্না করুন। পরিমাণ মত লবণ দেবেন। যেন মাংস আস্ত থাকে ও শুকনো শুকনো হয়।
অথবা মশলা মাখা মাংস পরিমাণ মত পানি দিয়ে সিদ্ধ করতে পারেন। এমন পরিমাণে মাংসে পানি দেবেন যেন মাংস সিদ্ধ হয় ও পানি শুকিয়ে যায়। পরে মাংসের টুকরাগুলো বেশী তেলে ভেজে নেবেন। মাংসের টুকরা যেন গোটা গোটা থাকে অর্থাৎ ভেঙ্গে যেন না যায়।
এবারে ২৫০ গ্রাম তেলে পেয়াজ কুচি সোনালী করে ভেজে অল্প আদা-রসুন পেঁয়াজ বাটা নেড়ে ২ কেজির মত পানি ঢেলে দিন। গরম মশলা, তেজপাতা ও পরিমাণ মত লবণ দিন। পানি ফুটে উঠলে চাল দেবেন। চালের পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করা মাংস, ঘন থকথকে শুরুয়া, মালাই সহ ঘন দুধ, কিশমিশ কুচি, জাফরান-গোলাপ পানি সহ পোলাও-এর ওপরে, নীচে, স্তরে স্তরে ছড়িয়ে দিন ও পোলাও দমে বসান। এতে পোলাও ঝরশ্বরে হবে।
আবার যে কোন একটি নিয়মে পোলাও রান্না করে পোলাও দমে দেবার পূর্বে রান্না করা মাংস, গোলাপ পানি সহ জাফরান, মালাই সহ ঘন থকথকে গাঢ় দুধ, কিশমিশ, পেস্তা বাদাম কুচি পোলাওর ওপরে নিচে স্তরে স্তরে ছড়িয়ে দিন। পরে যথা নিয়মে পোলাও দমে দেবেন।
মোরগ পোলাও শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, আতিথেয়তা এবং উৎসবের প্রতিচ্ছবি। যখনই কোনো বাড়িতে অতিথি আসে কিংবা কোনো বিশেষ উপলক্ষ আসে, তখন মোরগ পোলাও পরিবেশন করা হয়। দেশি মুরগির ঘন ও মসলাদার গ্রেভি যখন পোলাওয়ের সুগন্ধি চালের সঙ্গে মিশে যায়, তখন সেই স্বাদ কেবল পেট নয়—মনকেও ভরিয়ে তোলে। ঘি, জাফরান বা দুধে ভেজানো কিশমিশ আর বাদাম যুক্ত হলে এটি হয় আরও সমৃদ্ধ ও রাজকীয়। আধুনিক যুগে অনেক ধরনের পোলাও থাকলেও মোরগ পোলাও তার আলাদা ঐতিহ্য ও জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।