ডালনা রেসিপি
ডালনা দুই রকমের হয় মিষ্টি ও ঝাল ডালনা। মিষ্টি ভালনায় দই ও চিনির পরিমাণ বেশী দিতে হয়। ঝাল ডালনায় মরিচের পরিমান বেশী করবেন। এটি সাধারণত ভাত, রুটি বা লুচির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
ডালনার মূল আকর্ষণ এর ঘন মশলার ঝোল এবং সবজির স্বাদ বজায় রেখে রান্না করার কৌশল। এটি শুধুই খাদ্য নয়, বরং বাঙালির সংস্কৃতির একটি অংশ।
উপকরণ
১. ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া - ১ কেজি
২. আলু - ২৫০গ্রাম
৩. পেঁয়াজ বাটা - ১ চা চামচ
৪. ধনে বাটা - ১ চা চামচ
৫. জিরা বাটা - ১ চা চামচ
৬. আদা বাটা - ১ চা চামচ
৭. রসুন বাটা - ১ চা চামচ
৮. মরিচ বাটা - পরিমাণ মত বা নিজের পছন্দ মত
৯. গরম মশলার গুড়া - ১/২ চা চামচ
১০. তেজপাতা - ২ টা
১১. চিনি - ২ চা চামচ
১২. ঘি - ১ চা চামচ
১৩. লবণ - পরিমাণ মত
১৪. দই - ১/২ কাপ
প্রস্তুত প্রণালি
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি দিয়ে ডালনা রান্না করা হয়। ১ কেজি সবজিতে ২৫০গ্রাম আলু দেবেন।
ডালনার সবজি ও আলু খোসা ছাড়িয়ে টুকরা করে ঘি-এ ভেজে নেবেন। ডাবনায় ইচ্ছা করলে দুধে অল্প ময়দা গুলে নামানোর পূর্বে দিতে পারেন। নামানোর পূর্বে ভালনায় ঘি, গরম মশলার গুড়া দেবেন। ডালনার সবজি ভাজবার সময় মশলা পানিতে ভাল মত গুলে সবজিতে দেবেন অথবা তেলে মশলা কষিয়ে ভাজা তরকারী মশলায় দেবেন। ঘি-এ জিরা বা পাঁচ ফোড়নের ফোড়ন দিয়ে ডালনা যোগ করে ফুটিয়ে নামাবেন।
ফুলকপির ডালনায় ফুলকপি পরিমাণ মত টুকরা করে পানিতে অর্থ সিদ্ধ করে নিন। পরে ঘি-এ কপি ভেজে ডালনার নিয়মে ডালনা রান্না করুন। ওলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, লাউ, কচি কাঁঠাল ইত্যাদির ডালনা প্রায় একই ভাবে রান্না করা হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি ডালনায় আলু যোগ করা যেতে পারে। বাঁধাকপি ও ফুলকপির ডালনায় মটরশুটি যোগ করতে পারেন।
লাউ-এর ডালনায় আলু ও ডালের বড়ি যোগ করতে পারেন। বড়ি ও আলু তেলে ভেজে নেবেন। পরে ডালনার নিয়মে ডালনা রান্না করবেন। অন্য পাত্রে ঘি-এ জিরা ফোড়ন দিয়ে ডালনায় দেবেন ও ডালনা দু'একবার নেড়ে নামিয়ে নেবেন।
মিষ্টি কুমড়ার ডালনায় আলু, মটরশুটি, ভিজানো ছোলা, বড়ি, চিংড়ি মাছ যে কোন একটি যোগ করতে পারেন। এতে বড়ি তেলে ভেজে নেবেন। মিষ্টি কুমড়া টুকরা করে কেটে ও আলু খোসা ছাড়িয়ে তেলে ভেজে নেবেন। পরে তেলে মশলা কষিয়ে কুমড়া, আলু, ভিজানো ছোলা অথবা মটরশুটি (বড়ি দিলে ভেঙ্গে নিতে হবে) ও পরিমাণ মত পানি, চিনি ও লবণ দিতে হবে। তরকারী সুসিদ্ধ হলে নামিয়ে পরে ঘি-এ জিরা ফোড়ন দিয়ে ডালনায় দেবেন। নামাবার কিছু আগে গরম মশলা গুড়া ছড়িয়ে দিতে হবে ও ফুটিয়ে নামাতে হবে।
আলুর ডালনায় মটরশুটি যোগ করতে পারেন। এতেও আলু ভেজে নিতে হবে। পটল যোগ করতে পারেন তবে পটোল টুকরা করে কেটে প্রথমে ভেজে নিতে হবে। পরে যথা নিয়মে ডালনা রান্না করতে হবে।
দু'তিন রকমের তরকারি এক সাথে যোগ করে একই নিয়মে ডালনা রান্না করতে পারেন।
আলু ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া, মটরশুটি দিয়ে এক সাথে যোগ করে ভালো ডালনা রান্না করতে পারেন। আবার আলু, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙ্গা, পটল, মূলা, রাদা আলু, একসাথে মিশিয়েও ডালনা ভাল হয়।
ডালনা বাঙালি রান্নার এক এমন পদ, যা শুধু স্বাদেই নয়, ঐতিহ্য ও আবেগেও পূর্ণ। প্রতিটি পরিবারে ডালনার একটি নিজস্ব ধারা থাকে—কেউ বেশি ঝোল দেন, কেউ খানিকটা ঘন, আবার কেউ বিশেষ কিছু মসলা ব্যবহার করেন যা শুধুই তাঁদের রান্নার বৈশিষ্ট্য।
ডালনার আসল সৌন্দর্য তার সরলতায়। অল্প কিছু উপকরণ আর সঠিক রান্নার কৌশলে তৈরি হয় এক অসাধারণ পদ, যা ভাত বা রুটির সঙ্গে অনায়াসে মানিয়ে যায়। এটি এমন একটি রান্না, যা উৎসবে যেমন মানায়, তেমনি দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ দুপুরেও অনন্য।
বর্তমান দ্রুতগতির জীবনে মানুষ অনেক সময় আধুনিক ও বিদেশি রান্নার দিকে ঝুঁকে পড়লেও, ডালনার মতো ঘরোয়া রান্নার আবেদন কখনও মুছে যায় না। এটি শুধু পেট ভরায় না, মনও ভরিয়ে তোলে।
অতএব, ডালনা কেবল একটি তরকারি নয়—এটি বাঙালির রসনা, সংস্কৃতি ও স্মৃতির অংশ। ডালনার প্রতিটি কামড়ে মিশে থাকে শিকড়ের টান, পরিবারের উষ্ণতা এবং এক চিরন্তন স্বাদ, যা যুগে যুগে বেঁচে থাকবে বাঙালির হৃদয়ে।